রোববার , ০৫ অক্টোবর ২০২৫
Sunday , 05 October 2025
২০২৫৭ ২০২৫৩ ২০২৫১

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫১, ৩ অক্টোবর ২০২৫

বিসিবি নির্বাচন

তিন বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে এবার নরম সুর তামিমপন্থিদের

তিন বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে এবার নরম সুর তামিমপন্থিদের

বিসিবির নির্বাচনের হাওয়া কি বদলে গেলো? এ ক’দিন শোনা গেছে, ক্রীড়া উপদেষ্টা বিসিবি নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন। তার পক্ষ তথা আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও তার প্যানেলকে জয়ী করার জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। বিসিবি নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করতে চান, কিন্তু আগে বিসিবির ফিক্সিং বন্ধ করেন।’

এবারের বিসিবি নির্বাচন ঘিরে যা হয়েছে, সেটা অসুন্দর, চরম স্বেচ্ছাচারিতা এবং রীতিমতো নোংরামি বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। তামিমের ভাষায়, ‘এর চেয়ে অসুন্দর আর কিছু হতে পারে না, যা ইচ্ছা তাই করা হচ্ছে। এটা সুন্দর প্রক্রিয়া হতে পারে না।’

তামিম ইকবালের শেষ কথা ছিল, ‘স্বেচ্ছাচারিতা আর নোংরামির প্রতিবাদ হিসেবেই মনোনয়ন প্রত্যাহার আমাদের। এই নির্বাচন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য একটা কালো দাগ হয়ে রইলো।’

শুধু হতাশা ব্যক্ত করে আর ক্ষোভ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত দেননি তামিম। নির্বাচন বয়কটের ঘোষণাও দিয়েছেন। তামিম ও তার পক্ষের ১৫ প্রার্থী মনোনয়ন তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন গতকাল বুধবার। তামিমের নেতৃত্বাধীন বিএনপিন্থিদের নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্তের কয়েক ঘণ্টা পর নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। সেই তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, তামিমপন্থিদের সাতজন আগামী ৬ অক্টোবরের বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এই যখন অবস্থা, ঠিক তখন আজ বিজয়া দশমীর ছুটির দিন বিকেলে ঘটে গেছে এক ভিন্ন ঘটনা। সেটাকে ঠিক কী নামে অভিহিত করা যায়, তা নিয়ে একটা ছোটোখাটো বিতর্ক হতেই পারে। কেউ কেউ সেটাকে ‘ইউটার্ন’, ‘পেছনে ফেরা’ কিংবা ‘মত পাল্টানো’ বলেও অভিহিত করছেন।

যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থি প্যানেলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা রফিকুল ইসলাম বাবুর কথা শুনে মনে হচ্ছে, তিনি পুরোনো কাসুন্দি না ঘেঁটে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চান।

তামিমের সাথে আরও যে ১৪ জন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, তার অন্যতম এই রফিকুল ইসলাম বাবু। যিনি সর্বশেষ বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনকার বিসিবিতে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রথমে যুগ্ম সম্পাদক ও পরে পরিচালকও হয়েছিলেন।

তিনি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে একদল কর্মী নিয়ে বিসিবিতে গিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি যা বলেন, তার মধ্যে মূলত তিনটি প্রস্তাব ছিল।

রফিকুল ইসলামের ভাষায়, নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা-বার্তা হয়েছে। অনেক কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। রীতিমতো একটা বিতর্কের জন্ম হয়েছে। এক কথায় বিসিবি নির্বাচন হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার প্রতিবাদে তারা নির্বাচন বয়কট করেছেন।

তার প্রথম প্রস্তাব হলো-সম্ভব হলে বিসিবির এই নির্বাচনী তফসিল বাতিল করে নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা। মানে, আগামী ৬ অক্টোবর যে প্রক্রিয়ায় ও যাদের নিয়ে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে যেহেতু একটা বড় অংশের অংশগ্রহণ থাকছে না, তাই এই নির্বাচন বাতিল করে কিছু সময় পর আবার একটা সর্বজনগ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। যে নির্বাচনের গায়ে কোনো সমালোচনার দাগ লাগবে না। কোনো পক্ষ বাড়তি সুবিধা পাবে না। এক কথায় অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেন হয়, তার ব্যবস্থা করা।

রফিকুল ইসলাম বাবুর দ্বিতীয় প্রস্তাব- যদি নির্বাচন বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব না হয়, তাহলে যেন একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। যেখানে সব মহলের সম্পৃক্ততা থাকবে। এই অ্যাডহক কমিটিই আপাতত ও সামনের দিনগুলোয় বিসিবি পরিচালনা করবে। তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুনভাবে দিন-তারিখ ঠিক করে বোর্ড নির্বাচন করা।

বিএনপিপন্থিদের জোটের এ নেতার শেষ প্রস্তাব হলো-যদি ওপরের দুটির একটাও করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদই বোর্ড পরিচালনায় থাকবে। তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এক পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন করে তাদের হাতে বোর্ড পরিচালনার ভার ছেড়ে দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে রফিকুল ইসলাম বাবু শুধু ওই তিন প্রস্তাব পেশই করেননি, পরিষ্কার বলেছেন-আসলে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া হলেন ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক। তিনিই পারেন বিসিবি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে জটিলতা, কাদা ছোড়াছুড়ি এবং একটা বিতর্কের জন্ম নিয়েছে, তার অবসান করতে। এবং ক্রীড়া উপদেষ্টাকেই এ সংকট সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এর আগে ক্রীড়া উপদেষ্টাও তামিমদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। যদিও তখন তাতে রাজি হননি তামিমরা।

বাবুর দাবি, মিডিয়ার একটা অংশ তাদের (বিএনপিপন্থিদের) সাথে ক্রীড়া উপদেষ্টাকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক মিডিয়া বা বাইরের অনেকেই ক্রীড়া উপদেষ্টাকে আমাদের একটা প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমরা আর আমাদের গ্রুপ আর মাননীয় অ্যাডভাইজার ভার্সেস একটা গ্রুপ তৈরি হয়ে গেছে। আসলে সেটা না। মাননীয় অ্যাডভাইজার কিন্তু ক্রিকেট না, সব খেলাধুলার এখন অভিভাবক। আমরা উনার কাছে বলব যে, কী সমস্যা হয়েছে, সেটা কীভাবে সমাধান করা যায়। সেটার জন্য আমরা কিছু কথা বলব। উনি হলেন অভিভাবক, উনাকে আমরা আলাদা রাখি।’

রফিকুল ইসলাম বাবুর কথাটা কি একান্তই তার নিজের? না তার জোটের? তামিম ইকবালও কি তার কথার সঙ্গে একমত? বলে রাখা ভালো, তামিম ইকবাল গতকাল বুধবার রাতের ফ্লাইটেই দুবাই চলে গেছেন। তামিমের মত জানতে তার ঘনিষ্ঠজনদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তামিমও রফিকুল ইসলাম বাবুর কথার সঙ্গে একমত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম বাবু যে কথাগুলো বলেছেন, তার বক্তব্যে যে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলো তামিমের নেতৃত্বাধীন জোটেরই বক্তব্য। এবং এই নতুন প্রস্তাবের প্রস্তাবক, রূপকার হলেন বিসিবির সাবেক পরিচালক ও তামিম ইকবালের আপন ফুপা সিরাজউদ্দীন মোহাম্মদ আলমগীর।

তিনি জাগো নিউজকে জানান, আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাবু ভাইয়ের (রফিকুল ইসলাম বাবু) সঙ্গে কথা বলে আমিই এই প্রস্তাব দিয়েছি। সিরাজউদ্দীন মোহাম্মদ আলমগীর জানান, আগামী ৫ অক্টোবর যে কোর্টের ‘শুনানি’ আছে, সেদিনই নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা আনার অনুরোধ জানাতে বলি। বাবু ভাই সেই কথাই মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন।

নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত বদলের চিন্তাকে কী বলবেন? ইউটার্ন, মত বদল নাকি বিলম্বিত বোধোদয়? যাই বলা হোক না কেন, রফিকুল ইসলামের বক্তব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। তা হলো, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না। একপেশে কিছু সিদ্ধান্তও হয়েছে। তারপরও তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থিদেরও ভুল ছিল। তাদের চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনায় দক্ষতা, দূরদর্শিতার ঘাটতি ছিল এবং সমঝোতার ক্ষেত্রে তারাও সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। আজকের বিলম্বিত বোধোদয় ও মত বদলের পাশাপাশি বিকল্প প্রস্তাব পেশ কিন্তু তাই বলে দিলো।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়