জেলা প্রশাসক নাম পাঠিয়েছেন একজনের তালিকায় আরেকজন

বিসিবির নির্বাচন নিয়ে চলছে তুঘলকি সব কাণ্ড। যে যেভাবে পারছেন ক্ষমতা ব্যবহার করে কিংবা ম্যানেজ করে কাউন্সিলারশিপ নিয়েছেন। যেখানে আইনের কোনো বালাই নেই। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলারশিপ নিয়ে। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষর করে নাম পাঠিয়েছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য হেদায়েতুল ইসলাম ফ্রুটের। কিন্তু বিসিবির কাউন্সিলারশিপের তালিকায় নাম উঠেছে কমিটির ২ নম্বর সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনের।
বিসিবির এবারের নির্বাচনে গঠনতন্ত্রের ‘এ’ক্যাটাগরি থেকে প্রথমে অধিকাংশ জেলা থেকে আহ্বায়ক কমিটির বাইরে থেকে নাম পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেটি বিসিবি গ্রহণ করেননি। সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে তখন নাম পাঠানো হয়েছিল আব্দুল্লাহ আল কাইফের। পরে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আহ্বায়ক কমিটি থেকে নাম পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। যে কারণে দুই দফা সময় বাড়িয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাম পাঠানোর সময় দেওয়া হয়। একই কারণে তফসিলেও পরিবর্তন এনে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বরে পরিবর্তে ২৩ সেপ্টেম্বর করা হয়। সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে হেদায়েতুল ইসলাম ফ্রুটের কাউন্সিলারশিপ ফরমে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষর করেন ২২ সেপ্টেম্বর।
তারপর তা ডাকযোগে রেজিস্টার করে বিসিবিতে পাঠানো হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে, সেখানে সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ ছয়টি জেলার কোনো কাউন্সিলারের নাম ছিল না। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর আপত্তি গ্রহণ ও ২৫ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে পাঁচটি জেলার কাউন্সিলারের নাম চূড়ান্ত তালিকায় উঠে। যেখানে ছিল সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার নামও। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে হেদায়েতুল ইসলাম ফ্রুটের পরিবর্তে নাম উঠে আব্দুল্লাহ আল মামুনের।
কিন্তু কীভাবে এটি সম্ভব হলো? এ ব্যাপারে হেদায়েতুল ইসলাম ফ্রুটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি হতবাক হয়ে গেছি। এটি কী করে সম্ভব? জেলা প্রশাসক স্বাক্ষর করে আমার নাম পাঠালেন, আর তালিকায় নাম উঠল আরেকজনের। বিসিবি সেই নাম কীভাবে গ্রহণ করল। দেশে কি আইন কানুন বলে কিছু নেই। জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজেও তার স্বাক্ষর করা নাম তালিকায় না দেখে অবাক হয়েছেন।’কাউন্সিলার হয়ে আসা আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে এসএমএস করলেও সাড়া দেননি।
বিষয়টি নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আপনারা এ ব্যাপারে বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারাই ভালো বলতে পারবে।’এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হোসাইনের সঙ্গেও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানা গেছে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে কাউন্সিলারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কাউন্সিলার ফরম ছিল না। শুনানির দিন অ্যাডহক কমিটিতে তার নাম দেখে তারা কাউন্সিলার করে নেন। তিনি বলেন, ‘আপত্তি গ্রহণের পর শুনানির দিন আব্দুল্লাহ আল মামুন আমাদের জানান সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে নাম পাঠানো হয়নি। তিনি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তখন আমরা কমিটিতে তার নাম দেখে কাউন্সিলার করে নিই। কোনো কাউন্সিলার ফরম ছিল না। তাই জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরের বিষয়টিও তখন ছিল না। যে পাঁচজনকে আমরা এভাবে কাউন্সিলার করেছি, সেখানে আমাদের কমিটির তিনজনেই স্বাক্ষর আছে।’