বৃহস্পতিবার , ১৬ অক্টোবর ২০২৫
Thursday , 16 October 2025
২০২৫৭ ২০২৫৩ ২০২৫১

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ৯ অক্টোবর ২০২৫

৯ গোলের দুঃস্বপ্ন থেকে মশার যন্ত্রণা, বাংলাদেশ-হংকং লড়াইয়ে আরও যা ঘটেছে

৯ গোলের দুঃস্বপ্ন থেকে মশার যন্ত্রণা, বাংলাদেশ-হংকং লড়াইয়ে আরও যা ঘটেছে

পঞ্চমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবলে হংকংয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাও ১৯ বছর পর। আগের চারবারের দেখায় কোনোটিতেই অবশ্য জয়ের দেখা মেলেনি। তিনটি হারের বিপরীতে এসেছে কেবল একটি ড্র। এই চার লড়াইয়ে যেমন হতাশা আছে, আক্ষেপ আছে, তেমনি আছে বিতর্কিত মুহূর্তও। ফিরে দেখা যাক সেই লড়াইগুলো।

কুয়ালালামপুরে দুঃস্বপ্নের স্মৃতি

মারদেকা কাপ, ১৯৭৫

আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের তখন হাঁটি হাঁটি পা। মালয়েশিয়ার আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট মারদেকা কাপে খেলতে গিয়ে প্রথমবার সাক্ষাৎ মেলে হংকংয়ের। কুয়ালালামপুরের মারদেকা স্টেডিয়ামে ৯–১ গোলে হারের সেই স্মৃতি কেইবা আর এখন মনে রাখতে চাইবে। যদিও শুরুতে হংকংয়ের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। মোহাম্মদ হাসানউজ্জামানের পাস থেকে সুলতান আহমেদ গোলমুখে শট নিলেও পাননি জালের দেখা। বুকের ধুকপুকানি কাটিয়ে এরপর ম্যাচটি একপেশে বানিয়ে ফেলে হংকং। ৬ মিনিটে গোলবন্যার শুরুটা করেন অধিনায়ক চেং ইউন ইউ।

প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিট শেষে ব্যবধানটা দাঁড়ায় ৫–০তে। দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৪ গোল হজম করে বাংলাদেশ। বিপরীতে আবার একটি গোলও শোধ করে। ৮৫ মিনিটে সান্ত্বনাসূচক গোলটি আসে কাজী সালাউদ্দিনের পা থেকে। হংকংয়ের হয়ে হ্যাটট্রিক করেন ইউ কোক কিট। ৯–১ গোলের এই হার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের রেকর্ড হিসেবে টিকে থাকে টানা ৪ বছর।

হার না মানার তৃপ্তি

এশিয়ান কাপ বাছাই, ২০০৩

গায়ে তখন সাফ জয়ের সুবাস। স্বপ্নটাও তাই বড় হতে শুরু করে। অথচ প্রথম ম্যাচই জল ঢেলে দিল সবকিছুতে। দুর্বল লাওসের কাছে ২–১ গোলে হেরে অঘটনের শিকার হওয়ার পর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে যেত হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জিততে হতো ৫–০ ব্যবধানে। কার্যত তা অসম্ভব ছিল। বাংলাদেশও পারেনি কঠিন সমীকরণ মেলাতে। তবুও ম্যাচটি নিয়ে ইতিবাচক তো থাকাই যায়। হংকংকে তাদেরই মাটিতে রুখে দেওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। তাও দুই গোলে পিছিয়ে থেকে।

মংকক স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকে হংকং। বিরতি থেকে ফিরে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ৬৬ মিনিটে ডিফেন্ডার ফিরোজ মাহমুদ টিটুর গোলশোধের পর ৭৭ মিনিটে খেলায় সমতা আনেন মিডফিল্ডার মনোয়ার হোসেন। ২–২ গোলের ড্রয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশের বিদায় নিশ্চিত হলেও হংকংয়ের বিপক্ষে সেটাই তো বাংলাদেশের একমাত্র ‘তৃপ্তি’ ছোঁয়া এনে দিচ্ছে।

জয়ের লক্ষ্যে নেমে হতাশার হার

এশিয়ান কাপ বাছাই, ২০০৬

ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো হংকংকে আতিথেয়তা দিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সেই আতিথেয়তা নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নয় হংকং। মশার যন্ত্রণায় বাস ভ্রমণে বাজে অভিজ্ঞতা, হোটেলের পাশে রাতের বাজারের শব্দে ঘুম উবে যাওয়া, খাবারের পরিবেশ— ১৯ বছর পর সেসব অভিযোগই সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নতুন করে তুলে ধরেন আম্বাসা গাই, ‘এগুলো অব্যবস্থাপনা ছিল, নাকি ইচ্ছে করে করা হয়েছিল, জানি না।’

এমন প্রতিকূলতার পরও ঢাকা থেকে ১–০ গোলে জয় নিয়ে ফেরে হংকং। যার উল্টো চিত্রই ঘটাতে চেয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আরিফ খান জয়–হাসান আল মামুনরা হতাশাই উপহার দিয়েছেন। রক্ষণে রজনীকান্ত বর্মণ ও পোস্টের নিচে বিপ্লব ভট্টাচার্য দারুণ খেলেছিলেন। ৮২ মিনিটে একটি ভুলের সুযোগ নিয়ে তা কাজে লাগান চান সিউ কি।

ভরাডুবিতে শেষ

এশিয়ান কাপ বাছাই, ২০০৬

বাজে আতিথেয়তা পাওয়ার ক্ষোভ আম্বাসা মেটালেন নিজের মাঠেই । মংকক স্টেডিয়ামে তার জোড়া গোলে হংকং পায় ২–০ ব্যবধানের জয়। আর বাংলাদেশের কপালে জোটে ভরাডুবি নিয়ে এশিয়ান কাপ বাছাই শেষ করার অস্বস্তি। ৬ ম্যাচে কোনো জয় না পেয়ে বরং হজম করতে হয়েছিল ১৯ গোল।

হংকংয়ের বিপক্ষে সেই ম্যাচে লাল কার্ড দেখেছিলেন গোলরক্ষক আমিনুল ইসলাম। আলফাজ আহমেদের শেষ ম্যাচ হওয়ার কথা থাকলেও পরে অবশ্য অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। ৯০ মিনিটে বাংলাদেশও তেমন গোছালো ফুটবল উপহার দিতে পারেনি। কে জানতেন, ১৯ বছর পর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের মঞ্চেই হংকংয়ের সঙ্গে আবার দেখা হবে বাংলাদেশের।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়