দুর্বল পুয়ের্তো রিকোর সঙ্গে ছেলেখেলা করল আর্জেন্টিনা

দুই দলের ব্যবধানটা স্পষ্ট। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ বছর ৫ মাস ১২ দিন ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের নম্বর ওয়ান ছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর হালনাগাদ করা র্যাঙ্কিং অনুসারে তাদের বর্তমান অবস্থান তৃতীয়। তাদের চেয়ে ১৫২ ধাপ পিছিয়ে থাকা পুয়ের্তো রিকোর সঙ্গে কেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তা অনুমেয়ই ছিল। অনেকটা হেসেখেলে পুয়ের্তো রিকোকে ৬-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা।
২০২৩ সাল থেকে মায়ামির চেজ স্টেডিয়াম লিওনেল মেসির ঘরের মাঠ। সেখানেই তিনি আজকের (বুধবার) ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলের একাদশে ফিরলেন। আগের ম্যাচে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করার দৃশ্য গ্যালারিতে বসে দেখেছিলেন এই মহাতারকা। যদিও পুরো হতাশ হতে হয়নি, লো সেলসো-লাউতারোরা ১-০ ব্যবধানে হারান তাদের লাতিন প্রতিপক্ষকে। গত ম্যাচে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার আক্ষেপ হয়তো আজ শোধ করার লক্ষ্যে নেমেছিল লিওনেল স্কালোনির দল!
আলবিসেলেস্তেদের হয়ে অ্যালেক্সিস ম্যাক-অ্যালিস্টার ও লাউতারো মার্টিনেজ জোড়া এবং গঞ্জালো মন্টিয়েল একটি গোল করেছেন। আরেকটি গোল হয়েছে পুয়ের্তো রিকো ডিফেন্ডার স্টিভেন এচেভেরিয়ার আত্মঘাতি অবদানে। গোল না পেলেও দুটি অ্যাসিস্ট করেছেন মেসি। ম্যাচে বল দখল থেকে শট সর্বত্র দাপট দেখিয়েছে আর্জেন্টিনা। ৬৯ শতাংশ পজেশনের পাশাপাশি মেসি-অ্যালিস্টারদের নেওয়া ২৫ শটের মধ্যে ১১টি লক্ষ্যে ছিল। অন্যদিকে, ৫ শটের মধ্যে ৩টি লক্ষ্যে রাখতে পারে পুয়ের্তো রিকো।
এদিন শুরু থেকেই পুয়ের্তো রিকোর রক্ষণকে চেপে ধরে আর্জেন্টাইনরা। দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মাঝেই ১৪ মিনিটে লিড পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। জুলিয়ানো সিমিওনের কাট ব্যাকে বল পেয়ে মেসি শট নিয়েছিলেন প্রথমে, গোলরক্ষকের বাধায় ফিরে আসার পর ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করতে না পারার সুযোগে পেয়ে যান ম্যাক-অ্যালিস্টার। হেড দিয়ে সেটি জালে জড়ান লিভারপুলের এই তারকা মিডফিল্ডার। ২৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মন্টিয়েল। পুয়ের্তো রিকো ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে তাকে বলটি বাড়ান মেসি, এরপর ভলি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এই আলবিসেলেস্তে ডিফেন্ডার।
১৩ মিনিট বাদে ব্যবধান আরও বাড়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। মেসির ক্রসে গঞ্জালেসের মাথায় ছুঁয়ে ম্যানুয়েল লোপেজ গোলমুখে পেয়ে যান। জটলার মধ্যে শট না নিয়ে তিনি বাড়ান ম্যাক অ্যালিস্টারের দিকে। গতিময় শটে অ্যালিস্টার নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন। বিরতির আগেই ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ততক্ষণ পর্যন্ত খুব একটা পরীক্ষা দিতে হয়নি এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে। ৪০ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের জোরালো শটে ডাইভ দিয়ে তিনি গোলবার অক্ষুণ্ন রাখেন। মেসির নেওয়া একটি ভলি পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ওতামেন্ডি-লো সেলসোর বদলি হিসেবে নেমে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে লাউতারো রিভেরো ও আনিবাল মোরেনোর। এর আগে ম্যানুয়েল লোপেজও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। দিবু মার্টিনেজকে উঠিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন গোলরক্ষক ফাকুন্দো ক্যাম্বেস। বিরতির পর আরও তটস্থ ছিল পুয়ের্তো রিকোর রক্ষণ। তবে তাদের জটলার মধ্যে শট নেওয়া কঠিন হচ্ছিল আর্জেন্টাইনদের জন্য। ৬৪ মিনিটে গঞ্জালেসের শট এচেভেরিয়ার পায়ে লেগে দিক পাল্টে আত্মঘাতি গোলে পরিণত হয়।
মিনিট নয়েক পর মেসির শট ঠেকিয়ে তাকে গোলবঞ্চিত করেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক। তবে ব্যবধান বাড়ানোর সময় যে তখনও অনেক বাকি। বদলি নামা লাউতারো মার্টিনেজ ৭৯ ও ৮৪ মিনিটে আরও দু’বার পুয়ের্তো রিকোর জালে হানা দেন। প্রথমটিতে গঞ্জালেস শট নিতে না পারলেও সামনেই থাকা মার্টিনেজ বল পেয়ে যান। অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করেছেন তিনি। এরপর মেসির ব্যাকহিলে বল পেয়ে দূরের পোস্ট ঘেঁষে মিলান স্ট্রাইকার নিজের দ্বিতীয় এবং দলের ষষ্ঠ গোলটি করেন।